বণিক বার্তা।।
রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পটি দ্বিতীয় শ্রেণীর সেকেলে প্রযুক্তি দিয়ে নির্মিত হতে যাচ্ছে। মুখে আধুনিক প্রযুক্তির কথা বললেও এতে ৩০ বছর আগের বা পুরনো প্রযুক্তি ব্যবহার হবে, যা ভূমিকম্প ও বন্যা-জলোচ্ছ্বাসের হুমকি মোকাবেলায় সক্ষম নয়।

বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রযুক্তি ও পরিবেশ সুরক্ষা নিয়ে কাজ করেন, এমন পাঁচজন বিশেষজ্ঞ ও প্রযুক্তিবিদ রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওপর গবেষণা করে এমন মত দিয়েছেন। ৭ অক্টোবর শুক্রবার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে বিশেষজ্ঞ দলের গবেষণার ফলাফল তুলে ধরে সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটি।
বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী কোম্পানি থেকে প্রকাশ করা নথি, পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষা প্রতিবেদন (ইআইএ) ও দরপত্রের নথি বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞ দলটি আরো বলছে, এ প্রকল্প চালু হলে সুন্দরবন ও এর আশপাশের অধিবাসীর ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। অর্থনৈতিকভাবেও এটি ঝুঁকিপূর্ণ, যা বাংলাদেশকে ‘ফাঁকা পকেট’-এ পরিণত করবে। এ থেকে বাংলাদেশ কখনো বেরও হতে পারবে না। সংবাদ সম্মেলনে বিশেষজ্ঞ দলের পক্ষ থেকে দূষণ নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিশেষজ্ঞ রণজিৎ সাহু স্কাইপে যোগ দেন। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরও দেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে বিশেষজ্ঞদের মতামতগুলো পাঠ করেন জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এমএম আকাশ, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সদস্য সচিব আবদুল মতিন, শরিফ জামিল ও রুহিন হোসেন প্রিন্স। রণজিৎ সাহু বলেন, সুন্দরবনের মতো সংবেদনশীল জায়গার পাশে এ ধরনের বড় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র কখনো নির্মিত হয়নি। রামপাল প্রকল্পে কয়লার ছাই বাঁচানোর জন্য পুরনো প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। যাতে ওই ছাই বাজারে বিক্রি করা যায়। খরচ কমাতে ও আয় বাড়াতে নেয়া এ পুরনো প্রযুক্তির কারণে প্রকল্প থেকে পারদ নির্গত হওয়ার পরিমাণ বাড়িয়ে দেবে; যা সুন্দরবনের পানি ও মাটির সঙ্গে মিশে পুরো বনের জীববৈচিত্র্য ধ্বংস ও বিষাক্ত করে তুলবে।
সুলতানা কামাল বলেন, ‘সরকার কোন যুক্তিতে কেন রামপাল প্রকল্প এখনো করতে চাইছে, তা আমাদের কাছে পরিষ্কার নয়। রামপালের মতো রূপপুরের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষেত্রেও সরকারকে একই ধরনের আচরণ করতে দেখা যাচ্ছে। এখনো সময় আছে, সরকারের উচিত সুন্দরবন রক্ষার স্বার্থে এসব বৈজ্ঞানিক তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে এ প্রকল্প বাতিল করা।’
রুহিন হোসেন বলেন, রামপাল প্রকল্প নিয়ে জনগণের যে মনোভাব দেখা যাচ্ছে, তাতে এ নিয়ে ব্যাপক গণ-আন্দোলন গড়ে উঠবে। নিজে থেকে এ প্রকল্প বাতিল না করলে আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে বাধ্য করা হবে।
এমএম আকাশ বলেন, রামপাল প্রকল্পে যদি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়, তাহলে এর খরচ তিন গুণ বেড়ে যাবে। ফলে এখনই এ প্রকল্পের জন্য বাংলাদেশ ও ভারতকে বিপুল পরিমাণে ভর্তুকি গুনতে হবে। খরচ বাড়লে এই ভর্তুকি এমন পরিমাণে বাড়বে, যা বাংলাদেশের মতো দেশের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। পরিবেশ ধ্বংসের বিষয়টি আন্তর্জাতিক অপরাধ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটি রামপাল প্রকল্পের কারণে ক্ষতির বিষয়টিকে আন্তর্জাতিক আদালত ও দেশে আইনি লড়াইয়ে এ নিয়ে যাবে কিনা। সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে সুলতানা কামাল বলেন, ‘আমরা বিষয়টি বিচার-বিবেচনা করে দেখছি।’ শরিফ জামিল বলেন, ২০১০ সালে সরকার বিদ্যুৎ উত্পাদন বিষয়ে যে মহাপরিকল্পনা করেছে, তা বিদ্যুৎ উত্পাদন বিষয়ে পুরনো প্রযুক্তিকে বিবেচনা করে করা হয়েছে। ফলে সৌরবিদ্যুৎ বিষয়ে কম মনোযোগ দেয়া হয়েছে। কয়লায় বেশি বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কিন্তু বর্তমান সময়ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বিশ্বজুড়ে লোকসানি ও ব্যয়বহুল হয়ে উঠছে। আর সৌরবিদ্যুৎ ব্যয়সাশ্রয়ী হয়ে যাচ্ছে।